মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে আছে ফ্রিজিং গাড়িটি। চারদিকে অসংখ্য মানুষ, টিভি ক্যামেরা আর ফ্ল্যাশের ঝলক। কিন্তু যাকে ঘিরে এত সব আয়োজন, সেই মোশাররফ হোসেন রুবেল তার প্রিয় মাঠে রাখা ফ্রিজিং ভ্যানে শুয়ে আছেন চিরনিদ্রায়। গাড়িটির বাইরের দেয়ালে মাথা রেখে ভেতরে তাকিয়ে আছেন চৈতি ফারহানা রুপা।
কাচের দেয়াল ভেদ করে স্বামীকে শেষবার দেখার একটা চেষ্টা। কোলে থাকা একমাত্র সন্তান রুশদানের এখনো বোঝার বয়স হয়নি, কী ভয়ানক ঘটনা ঘটে গেছে। অথচ বছর দেড়েক আগেই গল্পটা ছিল অন্য রকম। সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা করে দেশে ফিরেছিলেন মোশাররফ রুবেল।
এমনকি তিনি আবার মাঠে ফেরার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। কিন্তু মারণরোগ তার পিছু ছাড়েনি। পুনরায় ফিরে আসা ঘাতক ব্যাধিকে আর হারাতে পারেননি রুবেল। তিন বছর ধরে জীবনসঙ্গীকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন যে মানুষটি, তিনি চৈতি ফারহানা। বিয়ে করেছিলেন ভালোবেসে। সংসারে আছে ফুটফুটে সন্তান। সংসার, ছোট বাচ্চা এবং ব্যাংকের চাকরি সামলে তিনি লড়ে গেছেন প্রিয় মানুষটির জন্য।
গত তিন বছর হাসপাতালের কেবিনটাই যেন হয়ে উঠেছিল রুবেল-চৈতির ঘরবাড়ি-সংসার। স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে একমাত্র সম্বল ঢাকার ফ্ল্যাটটাও বিক্রি করে দিতে হয়েছে। ক্যান্সারের চিকিৎসা খুব ব্যয়বহুল। এই অর্থ সংগ্রহের পেছনেও ছুটতে হয়েছে তাকে। যেখানে যতটুকু অর্থ ছিল, সব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন স্বামীকে বাঁচাতে। একটা সময় বিসিবিসহ নানা মাধ্যম থেকে কিছু অর্থ এসেছে বটে, কিন্তু রুবেলকে বাঁচানো যায়নি। চৈতি শেষদিকে হয়তো বুঝেও গিয়েছিলেন, ভালোবাসার মানুষটি আর ফিরবেন না।
তবু রুবেলের মন ভালো রাখতে চৈতির চেষ্টার কমতি ছিল না। হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা রুবেলকে গল্প পড়ে শোনাতেন। বাংলাদেশ দলের খেলা দেখার ব্যবস্থা করে দিতেন। স্বামীকে দেখাশোনার পাশাপাশি ল্যাপটপে করতেন অফিসের কাজ। স্বামী যাতে মানসিকভাবে এতটুকুও ভেঙে না পড়েন, সেই চেষ্টা করতেন। রুবেলের জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেছেন চৈতি। স্বামীর শেষ দিনগুলো ভালোবাসায় আগলে রেখেছিলেন। তাদের সাজানো সংসার তছনছ করে দিয়ে গেল ঘাতক ব্যাধি ক্যান্সার।
সূত্র : কালের কণ্ঠ